বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫২তম জন্মদিন

প্রতীক ইজাজ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চিরকালের অহঙ্কার। যেকোনো সঙ্কটে, সম্ভাবনায়, সংলাপে বাঙালিকে বারবার ফিরে যেতে হয় তারই কাছে, উত্তরণের আশায়। তার কাছেই তো দীক্ষা বাঙালির শুভ সংস্কৃতি, রাজনীতি ও মনোজাগতিক বোধের। ধর্মের নামে হানাহানি, ভোগবাদী পুঁজি কিংবা মনুষ্যত্বকে বিকিয়ে মানুষ যখন ছোটে অন্ধকার পথে, তখনই রবীন্দ্রনাথ আসেন আশার বৈতরণী নিয়ে। মন্ত্রণা দেন মুক্তির। আজ পঁচিশে বৈশাখ, বিশ্ব মানুষের কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫২তম জন্মদিন। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে (৬ মে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্ম নেন তিনি।
বাঙালি আজ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে এই বিশ্ববরেণ্য কবিকে। অর্পণ করবে প্রাণের অর্ঘ্য। নানা আয়োজনে উচ্চারিত হবে কবির প্রতি মানুষের অন্তহীন ভালোবাসা। রবীন্দ্র জয়ন্তী উপলক্ষে সংবাদপত্র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিওতে প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। দেয়ালে ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক শোভিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের ছবি সংবলিত পোস্টারে, আলোকচিত্রে। বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
যে পারে সে কিন্তু আপনিই পারে-নিজের এই বিশ্বাস সঞ্চয় করেই আজীবন পথ চলেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মা সারদা দেবী। পিতামহ ছিলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। তাদের পূর্বপুরুষ ছিলেন পূর্ববঙ্গের অধিবাসী। বাণিজ্য সূত্রে পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। পরে জমিদারি সূত্রে পুনরায় বসতি গড়ে ওঠে বাংলাদেশে।
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একাধারে কবি, কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, নাট্যাভিনেতা, সংগীত রচয়িতা, সুরকার, গায়ক ও চিত্রশিল্পী। লিখেছেন সহস্রাধিক কবিতা, ২৪টি নাটক, নাটিকা ও গীতিনাট্য, আট খণ্ডের ছোটগল্প, আটটি উপন্যাস, আড়াই হাজারের বেশি গান। আঁকা ছবি ও রেখাচিত্রের সংখ্যাও দুই হাজারের ওপর। লিখেছেন বিজ্ঞান ও দর্শনের বই। তার ডায়রি ও চিঠিপত্র আজ অমূল্য মানুষের জন্য। ভ্রমণ করেছেন পাঁচ মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ।
রবীন্দ্রনাথ মানুষের জন্য মঙ্গলবোধ নিয়ে কাজ করেছেন। মানুষকে শুনিয়েছেন বিভেদের মাঝে সাম্যের বাণী। তার মানবতা আর মানবিকতার ধর্ম ছুঁয়ে গেছে বাঙালির হূদয়। তাই অমৃতসরে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ রাজের দেওয়া ‘নাইট’ উপাধি অবলীলায় প্রত্যাখ্যান করেন ১৯১৯ সালে। প্রাচীন ভারতীয় তপোবনের আদলে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তার বিপুল কর্মকাণ্ডের সাক্ষী। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর রবীন্দ্রনাথের লেখা গান ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পেয়েছে। ভারতের জাতীয় সংগীত ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারত ভাগ্যবিধাতা’ও তারই রচনা।
তারপর একদিন পাল তুলে বিদায়ে চলে যান দূরে-বহুদূরে। টানা চার বছর রোগভোগের পর ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট (২২ শ্রাবণ ১৩৪৮) জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ওপরতলার একটি কক্ষে প্রাণত্যাগ করেন তিনি। রেখে যান মানুষের জন্য অমোঘ আশীর্বাণী-‘হে নূতন/দেখা দিক আর-বার/জন্মের প্রথম শুভক্ষণ।/তোমার প্রকাশ হোক কুহেলিকা করি উদ্ঘাটন/সূর্যের মতোন।’