হুমায়ূন আহমেদের চেহলাম

জননন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের চেহলাম অনুষ্ঠিত হলো গতকাল মঙ্গলবার। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাকায় বনানী ডিওএইচএস কমিউনিটি সেন্টারে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় এ উপলক্ষে দোয়া ও স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া গাজীপুরের নুহাশপল্লীতেও সকাল থেকে কোরআন খতম, কবর জিয়ারত ও এতিমদের খাওয়ানো হয়।
ডিওএইচএস কমিউনিটি সেন্টারে
বনানীর ডিওএইচএস কমিউনিটি সেন্টারে দিনভর কোরআন খতম করা হয়। সন্ধ্যায় মিলাদ মাহফিলে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এরপর শুরু হয় স্মরণসভা। এতে হুমায়ূন আহমেদের কাজের মূল্যায়ন ও তাঁর সঙ্গে নানা মুহূর্তের স্মৃতিচারণা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী ও গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, হামিদুল হোসেন বীর বিক্রম, কামরুল হাসান, অভিনেতা আবদুল কাদের, শমী কায়সার, হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের পক্ষে ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল, তাঁর স্ত্রী ইয়াসমীন হক, বোন সুফিয়া হায়দার ও ছেলে নুহাশ হুমায়ূন। উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, জোহরা তাজউদ্দীন, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারসহ হুমায়ূনের মা রাজিয়া ফয়েজ, ছোট ভাই আহসান হাবীব, তিন মেয়ে নোভা, শীলা, বিপাশা ও তাঁদের মা গুলতেকিন খানসহ পরিবারের সদস্যরা। অনুষ্ঠানের মাঝ পর্যায়ে রাত পৌনে আটটার দিকে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, তাঁর বাবা মোহাম্মদ আলী, মা তহুরা আলী, দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে চেহলাম অনুষ্ঠানে আসেন।
নুহাশপল্লীতে
‘নাম হলো তোমার হুমায়ূন/ গভীর নিদ্রায় আছো শয়ন/ নুহাশপল্লীর মির্জাপুর ইউনিয়ন/ তোমার স্মৃতি মনে করে/ ঝরে মোদের চোখের জল/ বাংলা তোমাকে রাখবে মনে/ চন্দ্র সূর্য যতদিন থাকে অবিকল।’
নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করে কেন এক অনুরাগী এই কবিতা লিখে টানিয়ে দিয়েছেন নুহাশপল্লীর একটি গাছে। নুহাশপল্লীতেই চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন সবার প্রিয় লেখক। গতকাল মঙ্গলবার তাঁর চেহলামে এ উপলক্ষে সকাল থেকেই সাধারণ মানুষ নুহাশপল্লীতে আসতে শুরু করেন।
হুমায়ূন আহমেদের চেহলাম উপলক্ষে গতকাল আশপাশের এতিমখানার শিশুরা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত শুরু করে। কয়েকবার কোরআন খতম দেয় তারা। দুপুরে নুহাশপল্লীর বৃষ্টিবিলাসের বারান্দায় এই শিশুদের মধ্যে খাবার পরিবেশন করেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। এর আগে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এ সময় শাওনের সঙ্গে ছিল দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিত, বাবা মোহাম্মদ আলী ও মা তহুরা আলী।
পরে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শাওন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নুহাশপল্লীর আশপাশের ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার এলাকায় যে কয়টি এতিমখানা আছে সেখানকার সব শিশুকে আজ এখানে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। তারা কোরআন খতম করেছে। পরে আমি নিজে বেড়ে তাদের খাইয়েছি। কারণ, হুমায়ূন আহমেদ নিজে বেড়ে খাওয়াতে পছন্দ করতেন।’
দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিত সম্পর্কে তাদের মা শাওন বলেন, ‘ওরা চেহলাম কী, বোঝে না। ওরা বুঝতে পারছে না, ওদের বাবা নেই। নিষাদের ধারণা, ওর বাবা মাঝেমধ্যে আসবে।’
ভাত, গরুর গোশত ও মাষকলাইয়ের ডাল দিয়ে গতকাল চেহলামে আসা এতিম শিশুদের খাওয়ানো হয়। শাওনের বাবা মোহাম্মদ আলী জানান, এই খাবার হুমায়ূন আহমেদের খুব প্রিয় ছিল।
বাংলা সাহিত্যের নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ গত ১৯ জুলাই নিউইয়র্কে ইন্তেকাল করেন। ২৪ জুলাই তাঁর মরদেহ গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে নুহাশপল্লীর লিচুবাগানে দাফন করা হয়।