বইয়ের বিস্তারিত

Book Name : অনুবাদ কাব্যসমগ্র/বুদ্ধদেব বসু
Author Name : সম্পাদনা : মুহম্মদ নূরুল হুদা
Price : Tk.750.00/=
ISBN Code : 978-984-8796-45-0









Book Details :

অনুবাদ সাহিত্যের মৌলিক শাখা নয়, কিন্তু এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় বিকল্পহীন পুনর্সৃষ্টি। তাই অনুবাদ সাহিত্যপ্রক্রিয়া হিসেবে সচেতন নির্মাণের দাবিদার। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অনুবাদ বহুভাষাভাষী বিশ্বে যোগাযোগের সবচেয়ে কার্যকর ও স্বীকৃত মাধ্যম। বাংলা ভাষায় এই অনুবাদের ইতিহাস অন্তত পাঁচ শ’ বছর, যার শুরু সংস্কৃত, ফারসি, গ্রিক, ল্যাটিন প্রভৃতি প্রাচীন ভাষার মৌলিক রচনা অভিযোজনের মধ্য দিয়ে। এই সুদীর্ঘকালের অনুবাদ-কর্মে অমিতশক্তিধর অসংখ্য অনুবাদকের আবির্ভাব ঘটেছে। তবে সকল অনুবাদককে ছাপিয়ে পুরো বিংশ শতাব্দী জুড়ে যে নামটি স্বমহিমায় প্রোজ্জ্বল, তাঁর নাম বুদ্ধদেব বসু।
তিনি তাঁর অভিনিবেশী পাঠ ও অননুকরণীয় পুনর্সৃষ্টির দক্ষতায় সংস্কৃত, ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান প্রভৃতি ভাষার কয়েকজন কালজয়ী কবি ও তাঁদের ব্যতিক্রমী কাব্য-কবিতা বাংলায় অনুবাদ করেছেন। লক্ষ্য, বাঙালি পাঠককে বিশ্বকবিতার সঙ্গে পরিচিত করানো আর সেইসঙ্গে বাংলা কবিতাকে আধুনিক বিশ্বকবিতার সমতলে নিয়ে আসা।
এই অনুবাদ-সংগ্রহে তাঁর অনূদিত প্রায় সব কাব্য ও কবিতা স্থান পেয়েছে। এখানে আছে কালিদাসের মেঘদূত, শার্ল বোদলেয়ার : তাঁর কবিতা, হ্যেল্ডার্লিন-এর কবিতা, রাইনের মারিয়া রিলকে-র কবিতা, চীনে কবিতা, মার্কিনি কবিতা, রুশ কবিতা আর সুবিস্তৃত সম্পাদকীয়, টীকা, গ্রন্থপরিচয়, চিত্রসূচি ইত্যাদি। ছাত্র, শিক্ষক, কবি, অনুবাদকসহ সাহিত্যের নিবিষ্ট পাঠক-পাঠিকার জন্যে অবশ্যপাঠ্য এই সঙ্কলন। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রোত্তর আধুনিকতার পথিকৃৎ বুদ্ধদেব বসুর  মনোজাগতিক গঠন ও সৃষ্টিরহস্যেরও এক অনুপুঙ্খ দলিল এই কাব্যানুবাদ। ভিন্ন ভাষার ঐশ্বর্য নিয়ে তিনি বাংলা ভাষার দিগন্তকে বিশ্বসীমায় প্রসারিত করেছেন। তাঁর প্রতি সমকাল ও উত্তরকালের বাঙালির সশ্রদ্ধ প্রণতি।

রবীন্দ্রোত্তর  বাংলা সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-৭৪) অপরিহার্য ও কিংবদন্তীপ্রতিম এক নাম। এমনও কেউ ভাবতে পারেন, ভাবলে ভুল হবে না-রবীন্দ্রনাথের হ্রস্বায়তনিক প্রতিদ্বন্দ্বী। নৃত্য সংগীত অভিনয় ও চিত্রকলা এই চারটি ক্ষেত্র ব্যতিরেকে সাহিত্যের সর্বক্ষেত্রে ফসল ফলিয়েছেন। তবে, আমাদের বুদ্ধদেবপ্রেমের আরো-এক বাড়তি আবেগসঞ্জাত যুক্তি আছে : তিনি পূর্ববঙ্গের সন্তান। আদি বাসভূমি বিক্রমপুরের মালখানগর গ্রামে, এখন মুন্সিগঞ্জ জেলায় পড়েছে।  শিক্ষাজীবনও সবটুকু কেটেছিল এখানেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পর্ব সমাপ্ত করেছিলেন রেকর্ড নম্বর পেয়ে এবং অদ্যাবধি সে-রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারে নি। কলকাতার ‘কল্লোল’ পত্রিকার সমান্তরাল ও সমধর্মী ‘প্রগতি’ সাহিত্যপত্র বের করেছিলেন ঢাকা থেকে ১৯২৬ সালে। ১৯৩১ সালে স্থায়িভাবে কলকাতায় চলে গেলে আধুনিক বাংলা কাব্যান্দোলন বা সাহিত্য-আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
তাঁর অন্যতম অক্ষয় কীর্তি কবি জীবনানন্দ দাশকে আবিষ্কার। জীবনানন্দকে আধুনিক বাংলা কাব্যে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পিছনে তাঁর অবদান সর্বজনস্বীকৃত। বুদ্ধদেব বসু ১৯৫৬ সালে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগ চালু করেন, সারা ভারতে এই অধ্যয়নপদ্ধতি তার আগে কোথাও দেখা দেয় নি।
এখন যাঁরা বয়সে ষাটোর্ধ্ব তাঁরাই স্বীকার করবেন যে, বোদলেয়ার হ্যেল্ডার্লিন রিলকের মুখোমুখি হওয়া সে-ই প্রথম। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত অবশ্য সামান্য দু-চারটি কবিতা ফরাশি-জর্মন থেকে কাব্যভাষান্তর করেছিলেন, তবে সে-সবই খণ্ডিত। বাঙালি পাঠক মোটামুটিভাবে পূর্ণতর রূপে এঁদের সঙ্গে পরিচিত হলেন বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদের মাধ্যমে।

অঁফঁ তেরিব্ল্ (দুরন্ত শিশু) বলতে যা বোঝায় বুদ্ধদেব বসু আধুনিক বাংলা সাহিত্যে ছিলেন তা-ই। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বন্দীর বন্দনা’ যখন প্রকাশিত হয় তখন তিনি মাত্র সতেরো বছরের তরুণ। তখনই তাঁর ঘাড়ে অশ্লীলতার তক্তি ঝুলিয়ে দেন ছুঁৎমার্গীয় বর্ষীয়ান-বর্ষীয়সী পাঠকের দল, কিন্তু জীবনব্যাপী এটি তাঁর অলংকার রূপেই শোভা পায়।
বাঙালি সাহিত্যভোক্তামাত্রই যে-এক বিশেষ ক্ষেত্রে তাঁকে তুলনারহিত বলে স্বীকার করতে বাধ্য হন, তা হল পাশ্চাত্য সাহিত্যে আধুনিকোত্তম বলে স্বীকৃত ফরাশি ও জর্মন তিন কবি শার্ল বোদলেয়ার, ফ্রিডরিশ হ্যেল্ডার্লিন ও রাইনের মারিয়া রিলকে-এঁদের সঙ্গে বঙ্গভাষী কাব্যপ্রেমীদের পরিচয় করানোর দৌত্যকর্ম তাঁর বিহনে সম্ভব হতো না।
আর প্রাচ্যের কবি কালিদাস-যাঁকে জর্মন অনুবাদে পাঠ করে গ্যোয়টে মুগ্ধ হয়েছিলেন, তাঁর বিশ্বগ্রাসী কাব্য ‘মেঘদূতম্’-এর আধুনিক কাব্যভাষায় অনুবাদ বুদ্ধদেব বসুর আর-এক অক্ষয় কীর্তি।
বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদ-কাব্যসাহিত্যের সংগ্রথিত কোনো একক সংকলন এই প্রথম প্রকাশিত হলো।