বইয়ের বিস্তারিত

Book Name : সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ : উপন্যাসসমগ্র
Author Name : সম্পাদনা : ড. হায়াৎ মামুদ
Price : Tk.250.00/=
ISBN Code : 984-446-039-5









Book Details :

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক স্তম্ভপ্রতিম কথাশিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ (১৯২২-৭১) 'কল্লোল'-এর ধারাবাহিকতা তাঁর ভিতরে প্রবাহিত, আবার তিন নতুন বাংলা কথাসাহিত্যেরও এক বলিষ্ঠ উদ্‌গাতা। জগদীশ গুপ্ত ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরসূরী এই লেখক অগ্রজদের কাছ থেকে পাঠ গ্রহণ করেছেন; ক'রে এগিয়ে গিয়েছেন অনেক দূর অবধি। সাম্প্রতিক কথাসাহিত্যিকদের মধ্যেও যে তাঁর উৎসারিত জনধারা প্রবহমাণ, এও তাঁর সৃজনী সচলতার এক স্যা। অথচ তাঁর সমগ্র রচনা কতটুকুই-বা : দুইটি গল্পগ্রন্থ, তিনটি উপন্যাস, তিনটি নাটক, কিছু অনুবাদ, অগ্রন্থিত কিছু কবিতা-গল্প-একাঙ্ক-প্রবন্ধ-গ্রন্থালোচনা। এই গল্প ও মহার্ঘ ঐশ্বর্যই তাঁকে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক কৃতী পুরুষে পরিণত করেছে, প্রথম আধুনিক বাঙালি-মুসলমান কথাসাহিত্যিক রূপে মহিমা দিয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও মীর মশাররফ হোসেন থেকে যে-বাংলা কথাসাহিত্যের ধারা উৎসারিত হয়েছে, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ তার উত্তরসূরী ঔপন্যাসিক। ঔপন্যাসিক হিশেবে, নতুন রীতির নাট্যকার ও গল্পকার হিশেবেও, তাঁর অবস্থান বাংলা সাহিত্যে অমোঘ। মাত্র আটটি গ্রন্থ রচনা করে এই কৃতিত্ব বাংলা কথাসাহিত্যে আর কে অর্জন করেছেন!
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর গল্প-উপন্যাস-নাটকের কেন্দ্রমর্মে আছে 'উন্মুখ প্রবৃত্তি' আর 'মনোভাবের বিশ্লেষণ' (জগদীশ গুপ্তের ভাষায়)। বিংশ শতাব্দীর সূচনামুহুর্তে রবীন্দ্রনাথের 'চোখের বালি' উপন্যাসে এই বিষয়গুলি উত্থাপিত হয়। বহির্জগতের রূপায়ণ তো আছে; থাকবেই; তার সঙ্গে যুক্ত হল ব্যক্তি ও সমাজের দোলাচল, ব্যক্তির আরণ্যক অন্তর্ভুবন। আধুনিক কথাসাহিত্য বাস্তবের এই অন্তঃশায়ী তল্‌-টিকে আবিষ্কার করেছে, 'ভিতরকার মানুষ'-এর অবিরল উন্মোচন তার অভীষ্ট। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র সমগ্র সাহিত্যকর্মে জীবনের এই ভিতর-লোকই উদ্‌ঘাটিত। তার মানে এই নয় যে তিনি বাইরের বাস্তবকে অবহেলা করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র থেকে তিরিশের লেখকদের রচনায় সমাজের উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তের জীবনে নেমে এসেছে বাংলা কথাসাহিত্য। মাত্র ষাট-সত্তর বছরের মধ্যেই বাংলা কথাসাহিত্যে দুর্নিবার হয়ে উঠলো সাধারণ মানুষ। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র গল্প-উপন্যাস-নাটকেও আমরা দেখি এইসব সাধারণ মানুষদের : মাজারের খাদেম, গ্রামের স্কুল-মাস্টার, মফস্বল শহরের স্কুল-মিস্ট্রেস, নৌকার মাঝি, স্টিমারের সারেং, খালাসি, ভিখিরি, ভিখিরিনী, খুনী, কৃষক, মৌলবি, পীরসাহেব ─এবং আরো অনেকে। এইসব সাধারণ মানুষের জীবন নিয়েই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ রচনা করেছেন অন্তর্দর্শী অসামান্য আলেখ্যমঞ্জরী। তা কোথাও বাস্তবকে অতিক্রম করে নি, বরং বাস্তবের আন্তরশাঁসকে ছেঁকে তুলেছে। আশ্চর্য সংযত সংহত নিরুত্তেজ গভীর গম্ভীর তাঁর রচনা। তাঁর ভিত্তি বাস্তবতায়, কিন্তু দুর্গের শীর্ষের পাখির মতো, তাঁর উড়াল কোনো গহীন প্রতীকতায়।
দীর্ঘকাল সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ ছিলেন দেশের বাইরে, কিন্তু তাঁর রচনার কেন্দ্র থেকে গেছে বাংলাদেশের গ্রাম; সমাজের উচ্চ কোটির অধিবাসী ছিলেন ওয়ালীউল্লাহ্‌, কিন্তু তাঁর গল্প-উপন্যাস-নাটকে বর্ণিত হয়েছে সাদারণ মানুষেরই ইতিবৃত্ত। কথাহাসিত্যে তিনি নতুন রীতির সূত্রধর : ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-গোপাল হালদার-বুদ্ধদেব বসু-সুঞ্জয় ভট্টাচার্য উপন্যাসে যে-চেতনাপ্রবাহরীতির ধারক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ তা সঞ্চালিত করেছেন ছোটোগল্পে; উপন্যাসে করেছেন অস্তিত্ববাদের প্রয়োগ; নাটকে অজ্ঞাত সম্ভাবনার দরোজা খুলে দিয়েছেন। গূঢ়ভাষী এই কথকের রচনায় নিয়তি ও বস্তুপৃথিবী, চাঁদ ও জলধারা, জীবন ও মৃত্যুচেতনা মিলেছে এক করতলে এসে।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌-রচিত সমুদয় গল্প ─গ্রন্থাগারে গ্রন্থিত ও অগ্রন্থিত─বর্তমান সংকলনে প্রাপ্তব্য।